“একদা রবীন্দ্রনাথ ভারত তীর্থকে অগনিত জাতির মিলনক্ষেত্র
কল্পনা করিয়া বলিয়াছিলেন -
কেহ নাহি জানে, কার আহ্বানে কত মানুষের ধারা,
দুর্বার স্রোতে এল কোথা হতে সমুদ্রে হল হারা।
ভারততীর্থের অন্যতম প্রান্তিক দেশ বঙ্গভূমি সম্বন্ধেও এ কথা সমান
প্রযোজ্য। গঙ্গা- ক রতোয়া- লৌহিত্যবিধৌত, সাগর-পর্বত, রাঢ়-পুন্ড্র- বঙ্গ
- সমতট এই চতুর্জনপদসম্বন্ধ বাঙলাদেশে প্রাচিনতম কাল হইতে আরম্ভ
করিয়া তুর্কী অভ্যুদয় পর্যন্ত কত বিভিন্ন জন, কত বিচিত্র রক্ত ও
সংস্কৃতির ধারা বহন করিয়া আনিয়াছে তাহার সঠিক হিসাব রাখে নাই।
সজাগ চিত্তের ও ক্রিয়াশীল মননের রচিত কোনও ইতিহাসে তাহার সঠিক
হিসাব নাই এ কথা সত্য, কিন্তু মানুষ তাহার রক্ত ও দেহগঠনে, ভাষায় ও
সভ্যতার বাস্তব উপাদানে এবং মানসিক সংস্কৃতিতে তাহা গোপন করিতে
পারে নাই। সকলের উপর এই বিচিত্র রক্ত ও সংস্কৃতির ধারা তাহার প্রছ্ছন্ন
ইঙ্গিত রাখিয়া গিয়াছে বাঙালীর প্রাচীন সমাজবিন্যাসের মধ্যে। রাষ্ট্রীয়
ইতিহাসে সে ইঙ্গিত কিছুতেই ধরা পড়িবার কথা নয়।”